কাতার বিশ্বকাপের দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে উত্তেজনা। সংবাদমাধ্যম থেকে ক্রীড়াবো'দ্ধা এমনকি ভক্ত-স মর'্থক সবারই যেন এরই মধ্যে ঘু'ম হারাম। কোন দল ফেভারিট, কারা'ই-বা জিতবে বিশ্ব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট, তা নিয়েই চলছে বিস্তর কা'টাছেঁড়া। প্রিয় দলের ফাইনালের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে কারা', সেটি নিয়েও চলছে জোর চর্চা।
এবারের বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনার জন্য বিশেষ কিছু। কেননা, ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসির কার্যত এটিই 'হতে যাচ্ছে শেষ বিশ্বকাপ। তবে এ ব্যাপারে যদিও আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু পরের বিশ্বকাপ হবে ২০২৬ সালে। সে সময় মেসির বয়স হবে ৩৯ বছর! ফর্ম, ফিটনেস এতদিন পর্যন্ত ঠিক থাকবে কি না, সেটি নিয়ে একটা শঙ্কা তো আছেই। আর তাই আলবিসেলেস্তে ভক্তরা এবারের আসর ঘিরেই স্বপ্ন দেখছেন।
স্বপ্ন দেখার কারণও আছে ঢের। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে কো'পা আমেরিকার শিরোপা জেতা ছাড়াও কদিন আগে লা ফিনালিসিমায় শ্রেষ্ঠত্ব আশার পালে হাওয়া দিচ্ছে যেন। এ ছাড়া সবশেষ হারের রেকর্ড বছর তিনেক আগে। এ পর্যন্ত ৩৩ ম্যাচে আনবিটেন লিওনেল স্ক্যালোনির শিষ্যরা। আর ৫ ম্যাচে এই ধা'রাবাহিকতা ধরে রাখলে বিশ্বরেকর্ড গড়বে মেসি বাহিনী।
কাতার বিশ্বকাপের টপ ফেভারিট আর্জেন্টিনা তৃতীয় শিরোপার লড়াইয়ে মিশন শুরু করবে। যেভাবে ফাইনালে যেতে পারে আলবিসেলেস্তেরা।
৩২ দলের কাতার বিশ্বকাপে ‘সি’ গ্রুপে আছে আর্জেন্টিনা। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ সৌদি আরব, মেক্সিকো ও পোল্যান্ড। কোনো অঘটন না ঘটলে ধরে নেয়াই যায়, গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবেন মেসি-ডি মা'রিয়ারা। দলটির বর্তমান পারফরম্যান্সও এমন কিছুরই ই'ঙ্গিত দিচ্ছে। আর সে ক্ষেত্রে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা নকআউট পর্বে মুখোমুখি হবে ‘ডি’ গ্রুপের রানার্সআপ দলের।
যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ 'হতে পারে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স, ডেনমা'র্ক, অস্ট্রেলিয়া কিংবা তিউনিশিয়া। গ্রুপ ‘ডি’ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে করিম বেনজেমা-এমবাপ্পেদের ফ্রান্স। সে হিসাবে ‘ডি’ গ্রুপে রানার্সআপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ডেনমা'র্কের। ড্যানিশদের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা ফেভারিট হিসেবে খেলবে–এটাও বলা যায়।
সুপার সিক্সটিনে ডেনমা'র্ককে হারাতে পারলে কোয়ার্টার ফাইনালে বড় পরীক্ষায় নামতে হবে আর্জেন্টিনাকে। যেখানে ‘এ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও ‘বি’ গ্রুপের রানার্সআপের মধ্যকার শেষ ষোলো ম্যাচজয়ী দলের বিপক্ষে খেলতে নামবে মেসিরা। ‘এ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে নেদারল্যান্ডসের। অন্যদিকে ‘বি’ গ্রুপে ইংল্যান্ডের পর দ্বিতীয় হয়ে শেষ ষোলোয় উঠতে পারে ওয়েলস।
সে ক্ষেত্রে শেষ ষোলোয় লড়বে নেদারল্যান্ডস ও ওয়েলস এবং এই ম্যাচের জয়ী দল হিসেবে ডাচরাই আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অর্থাৎ, কোয়ার্টার ফাইনালে (৫৭তম ম্যাচ) আর্জেন্টিনার সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ 'হতে পারে ২০১০ সালের বিশ্বকাপের রানার্সআপ দল নেদারল্যান্ডস। ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও মেসিদের প্রতিপক্ষ ছিল ডাচরা। সেই ম্যাচে খেলা গড়িয়েছিল টাইব্রেকারে। যেখানে আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক রোমেরোর অতিমানবীয় পারফরম্যান্সে দলকে ফাইনালে উঠতে সাহায্য করে।
নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সেরা চারে উঠতে পারলে সেমিফাইনালের দ্বৈরথে তথা আসরের ৬১তম ম্যাচে ৫৭তম ম্যাচের জয়ী দল হিসেবে আর্জেন্টিনাকে খেলতে হবে ৫৮তম ম্যাচের জয়ী দলের বিপক্ষে। আর ৫৮তম ম্যাচে লড়বে ৫৩ ও ৫৪তম ম্যাচের জয়ী দল।
সমীকরণ অনুসারে ৫৩তম ম্যাচে খেলবে ‘ই’ গ্রুপের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন জার্মানি ও ‘এফ’ গ্রুপের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া। যেখানে ফেভারিট জার্মানি। অন্যদিকে ৫৪তম ম্যাচে লড়বে ‘জি’ গ্রুপের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল ও ‘এইচ’ গ্রুপের রানার্সআপ উরুগু'য়ে। যেখানে এগিয়ে থাকবে ব্রাজিল।
সে হিসাবে ৫৮তম ম্যাচে কোয়ার্টার ফাইনালে দেখা হওয়ার কথা ব্রাজিল ও জার্মানির। এই ম্যাচের জয়ী দলই খেলবে সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। যদি ৫৮তম ম্যাচে ব্রাজিল জয় পায়, তাহলে সেমিফাইনাল রূপ নেবে সুপার ক্লাসিকো ম্যাচে। যার আশায় ফুটবলবিশ্ব বসে থাকে। অন্যথায় জার্মানির বিপক্ষে লড়তে হবে আর্জেন্টিনাকে। যারা কিনা ২০১৪ সালে মেসিদের কাঁদিয়ে চতুর্থবারের মতো ফুটবল বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তোলে।
সেমিফাইনালের অ'গ্নিপরীক্ষা উতরাতে পারলে বিশ্বমঞ্চের ফাইনালে খেলবে আর্জেন্টিনা। উত্তর দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামে আগামী ১৮ ডিসেম্বর শিরোপার লড়াইয়ে নামবেন মেসি-ডি মা'রিয়ারা।