স্পেশালিস্ট ওপেনার সাইফ হাসানকে না নিয়ে গ্রোয়েন ইনজুরির কারণে খেলতে না পারা সাদমান ইসলামের বদলে সৌম্য সরকারকে দিয়ে ওপেন করানোর সি'দ্ধান্তটা অন্তত প্রথম ইনিংসে অসাড় প্রমাণ হয়েছে। সৌম্য কিছুই করতে পারেননি। ফিরে গেছেন শূন্য রানে। ক্রিকে'টে শত শত ‘০’ করার রেকর্ড আছে।
প্রথম ইনিংসে রান করতে না পারা অনেক ব্যাটসম্যানের পরের ইনিংসে সেঞ্চুরি বা ডাবল সেঞ্চুরিও হাঁকাতে পারেন। এমন রেকর্ড আছে। সৌম্যও যে তেমন কিছু করে বসবেন না বা তার করার সা মর'্থ্য নেই, সেই প্রশ্ন তোলা ঠিক হবে না। তবে হঠাৎ তাকে টেস্ট দলে এনে যে প্রক্রিয়ায় ওপেন করানো হলো, সেটা বড় প্রশ্ন হয়েই থাকলো।
সৌম্য বোর্ডের সাথে লাল বলের চুক্তিতে নেই। টেস্টে ২০ জনের প্রাথমিক দলেও তাকে রাখা হয়নি। মানে সাদা বলে সীমিত ওভারের ফরম্যাটই এখন তার ধ্যান-জ্ঞান। সৌম্য নিজেও হয়তো আশা করেননি টেস্ট দলে হঠাৎ ঢুকে পড়বেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ওয়ানডে সিরিজ শেষে রাজশাহীতে স্থানীয় টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলে কাটছিল সময়।
সাদমান-সাকিব আ'হত হওয়ায় তাকেই উড়িয়ে এনে টেস্ট দলে যুক্ত করা হলো। ম্যাচে নামিয়ে দেয়া হলো, খেলানো হলো টেস্টে ওপেনিংয়ের মতো কঠিনতম পজিশনে। ক্রিকেটীয় হিসেব নিকেশ ও যুক্তিতে তাকে ওপেন করতে পাঠানোটাই ছিল টিম ম্যানেজম্যান্টের চরম ভুল সি'দ্ধান্ত।
সে ভুলের খেসারত দিল দল। ৪০৯ রানের মোটামুটি বড় স্কোরের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই ধাক্কা খেল টাইগাররা। শ্যানন গ্ যাব'্রিয়েলের বলে অনসাইডে খেলতে গিয়ে শর্ট মিড উইকে'টে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরলেন ‘ওয়ানডে স্পেশালিস্ট’ সৌম্য। লেগ-মিডলে পিচ করা একটু ফুলার লেন্থের ডেলিভারি ছিল সেটা।
ব্যাকরণ মেনে সৌম্য সোজা ব্যাটে মাটিতে অনড্রাইভ করতে পারতেন। তাতে ঝুঁকি থাকতো কম। কিন্তু সৌম্য সেটা করলেন না। খেললেন সীমিত ওভারের অ্যাপ্রোচ ও স্টাইলে, কব্জির মোচড়ে মিডঅন আর মিডউইকে'টের মাঝখানে। সেটাই কাল হলো। হবে না কেন? তিনি তো আর টেস্টের নিয়মিত পারফরমা'র নন।
সারা বছর কাটে ওয়ানডে টি-টোয়েন্টি খেলে এবং সাদা বলে প্র্যাকটিস করে। কাজেই ওই ছোট্ট পরিসরের সাথে লাগসই শট খেলার অভ্যাসটা মজ্জাগত হয়ে গেছে। আজ সেই অভ্যাসবশত ওয়ানডে শট খেলেই আউট হলেন সৌম্য। এটুকু পড়ে মনে 'হতেই পারে, যত দোষ নন্দ ঘোষ। মানে সব দায় বুঝি সৌম্যর। আসলে ব্যাপারটা তা নয়।
সৌম্য ১১ টেস্টে ১৯ বার ওপেন করলেও পরবর্তীতে তাকে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলানো হয়েছে। তাই তাকে শেনন গ্ যাব'্রিয়েল আর আলজারি জোসেফের দ্রুতগতির বোলিংয়ের মুখোমুখি দাড় করানোটাই ছিল অদূরদর্শি সি'দ্ধান্ত। তাই সৌম্যর ওপেন করতে নেমে শূন্য রানে আউট হওয়ার প্রধান দায় তার নিজের নয়, টিম ম্যানেজমেন্টের।
সৌম্য না হয় এখন আর টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন না। কিন্তু এক নম্বর ওপেনার তামিম ইকবাল, ওয়ান ডাউন নাজমুল হোসেন শান্ত আর অধিনায়ক মুমিনুল হক, তারা? তাদের বেলায় তো আর ওই কথা প্রযোজ্য হয় না।
কিন্তু কঠিন সত্য হলো- দেশের ক্রিকে'টের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তামিম, টেস্টের সর্বাধিক সেঞ্চুরিয়ান অধিনায়ক মুমিনুল আর ভবি'ষ্যতের সম্ভাবনা শান্ত আউট হয়েছেন ওয়ানডে মেজাজে শট খেলেই। তামিম যেন সৌম্যর কার্বনকপি। একটু নাগালের ভেতরে থাকা বলকে অনসাইডে খেলতে গিয়ে শর্ট মিডউইকে'টে ক্যাচ।
শান্ত আগের বলে মিডঅফের পাশ দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ঠিক পরের বলেই শরীর বল থেকে দূরে রেখে পয়েন্ট ও গালির পাশ দিয়ে চালাতে গিয়েছিলেন। হয়েছেন গালিতে ক্যাচ।মুমিনুল উইকে'টের পেছনে ক্যাচ দিলেন আগ্রাসী ভ'ঙ্গিমায় খেলতে গিয়ে।
অফস্পিনার রাহকিম কর্নওয়ালের একটু জোরের ওপরে আসা ডেলিভারিকে স্কোয়ার ড্রাইভ খেলতে গিয়েছিলেন টাইগার ক্যাপ্টেন। পরিণতিতে কিপারের গ্লাভসে ক্যাচ। সৌম্যর মতো তারা হঠাৎ দলে আসেননি। কিন্তু তারাও টেস্টে ওয়ানডে মেজাজে চটকদার শট খেলতে গিয়েই উইকেট বিলিয়ে এসেছেন।
পরিবেশ-পরিস্থিতির আলোকে যার একদমই দরকার ছিল না। কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে কি করতে হবে, সেটা তাদের শেখাবেন কে? যারা দায়িত্বে আছেন, তারাই বা কী করছেন? চট্টগ্রাম টেস্টে জয়ের অবস্থানে থেকে হারের পর ঢাকা টেস্টেও টাইগারদের বিবর্ণ পারফরম্যান্সে এমন প্রশ্ন জোরেসোরেই উঠছে।